Загрузка страницы

টিপরা গ্রাম | রেমাকালেঙ্গা ভ্রমণ (১ম পর্ব)

পূজোর ছুটিতে এবার কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। দশমীর বিসর্জন শেষে বোধোদয় হলো যে, এবার ছুটিটা বেশ পানসে কাটলো। অফিস খুলতে আরো ২দিন সময় আছে। প্রান্ত আর শামীম এসে ধরলো, চলেন অন্তঃত এক রাতের জন্য জঙ্গলে চলে যাই। বন-জঙ্গল এমনিতেই ভালবাসি। নাগরিক সভ্যতায় হাঁপিয়ে উঠলেই আদিম বুনো পরিবেশে ডুব দিই। সাত-পাঁচ না ভেবে রাজী হয়ে গেলাম। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার রেমা-কালেঙ্গা সংরক্ষিত বন। নাম শুনেছি অনেক, কিন্তু মক্কার মানুষ অনেকেই যেমন হজ্জ্ব করতে পারেনা, আমার দশা হয়েছে তেমন। ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া, বাড়ির পাশের আরশীনগর আমার দেখা হয়না। মেঘালয়ের মেঘ ছুঁয়েছি, শিমলা-মানালিতে বরফকেলি খেলেছি, কোনদিন রেমা-কালেঙ্গায় পদচিহ্ন আঁকিনি। ভ্রমণের আগের রাত কাটে উত্তেজনায়, ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে কালনী এক্সপ্রেস ধরতে হবে। এদিকে সিলেট শহরে সেদিন ঠান্ডা আবহাওয়া। ড্রাইভাররা বোধহয় কাঁথা গায়ে আরাম করে ঘুমুচ্ছেন! রাস্তাঘাট একদম ফাঁকা, কোন যানবাহন নেই। কিছুটা পথ দৌঁড়ে, কিছুটা রিকশায়, বাকীটা অটোতে করে কোনমতে পৌঁছুলাম সিলেট রেলওয়ে স্টেশন। ট্র্রেন প্রায় ছেড়ে দিবে অবস্থা! তিনটি প্রাণীকে দৌঁড়ে আসতে দেখে প্ল্যাটফর্মের মানুষজন আমাদের চিৎকার করে ডাকছিলো, ও ভাই! তাড়াতাড়ি আসেন, ট্রেন কিন্তু ছাইড়া দিলো!

বগির সিড়িতে পা দিতেই গমগম শব্দ করে ট্রেনের চাকা ঘুরতে লাগলো। চারদিকে সবকিছু সবুজ হয়ে আছে। কাশফুল, পুকুর-নদী, ঘরবাড়ি, তালগাছ, নারিকেল গাছ পেরিয়ে আমরা ছুটে চলছি। সকালের নরম হিমেল বাতাস শরীর জুড়িয়ে দিচ্ছে। শায়েস্তাগঞ্জ নেমে আমরা সকালের নাস্তা করলাম। সেখান থেকে চললাম চুনারুঘাট। আমাদের বন্ধু ময়েংবম মেমিতা চুনারুঘাটে চাকরী করছেন, তাঁর সাথে দেখা করে সারপ্রাইজ দিলাম। মেমিতার সাথে কথা বলতে বলতে বেলা গড়িয়ে যায়, কথা শেষ হয় না। কিন্তু আমাদের সন্ধ্যা নামার আগে রেমা-কালেঙ্গা বনে পৌঁছুতে হবে। যাবার রাস্তা অত্যন্ত খারাপ। কাঁচা মাটির পথ, এখানে সেখানে গর্ত, মনে হবে একটু আগে কোন এক ডায়নোসর এদিকে হেঁটে গিয়েছে। প্রান্ত, শামীম এবং আমাদের চালক একটু পরপর সিএনজি থেকে নেমে ঠেলেঠুলে কাদার গর্ত থেকে সিএনজি উঠাচ্ছে। দুপুরের ভেতরেই আমরা কালেঙ্গা বাজারে পৌঁছুলাম। সেখানে নিসর্গ নামে একটি প্রাইভেট কটেজে আমরা থাকবো। নিসর্গ কটেজের ব্যবস্থাপক লাসু ভাই, আব্দুর রহমান লাসু নিজের বাড়িতেই কটেজ খুলে বসেছেন। বন বিভাগের সরকারি বাঙলোতে যারা সুযোগ পায় না, তারা এসব প্রাইভেট কটেজে উঠেন। থাকার ভাড়া, খাবারের দাম একটু বেশি হলেও একরাতের নোটিশের ট্যুরে এছাড়া আমাদের আর উপায় ছিলো না।

কটেজ রুমে ব্যাকপ্যাক রেখে হাফপ্যান্ট পরেই আমরা বেড়িয়ে পড়লাম। এ অঞ্চলে অনেক উপজাতির বসবাস। খোঁজ নিয়ে জানলাম, চুনারুঘাটে প্রায় ৬১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি বসবাস করে, যার মধ্যে ৪৭টি জাতিগোষ্ঠিকে সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে। এই কালেঙ্গা বনের আশেপাশেই জনপদ গড়ে তুলেছে ত্রিপুরা, ওরাঙ, দেববর্মা, গারো, হাজং, মনিপুরী ও সাঁওতাল। বন বিভাগের অফিস পেরিয়ে বিজিবি ক্যাম্প, তার সাথেই লাগোয়া টিপরা ভিলেজ। টিলার ফাঁকে ফাঁকে সবুজ ধানক্ষেত, সেখানে কাজ করছেন টিপরা নারীরা। টিলার উপরে মাটির ঘরবাড়ি, উঁচু ভুমিগুলোতে লেবু ও আনারসের বাগান। টিপরা ভিলেজে ঢুকেই সুনীল গাঙ্গুলীর “প্রথম আলো” উপন্যাসের কথা মনে পড়ে গেলো। ত্রিপুরা রাজ্যের মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্য, পতঙ্গী-উপপতঙ্গী দিয়ে ঘেরা রাজমহলের চিত্র ভেসে উঠলো। টিপরারা ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম আদিম গোষ্ঠি। ওদের পরিশ্রমী জীবনব্যবস্থা দেখে মুগ্ধ হলাম।

সূর্যের তেজ কোমল হবার পর কটেজে ফিরলাম। পেটে কিছু দানাপানি দিয়ে সামান্য বিশ্রাম নিলাম। চোখ লেগে আসছিলো, এমন সময় ঝিঁঝিঁপোকার শব্দে সন্ধ্যে হয়ে এলো। চারদিকে একটা গা ছমছমে পরিবেশ। বড়বড় কাঠগাছের ছায়া যেন আরো অন্ধকার করে দিলো। কান পাতলেই গাছের ডালে পশু-পাখির নড়াচড়া টের পাওয়া যায়। অবশ্য অন্ধকার বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো রূপালী চাঁদ। লাসু ভাইয়ের কটেজের উঠানটা ঝলমল করে উঠলো। জোনাকি পোকারা দল বেধে বেরিয়েছে। এর মধ্যে কুউক কুউক স্বরে ডাকছে এক রহস্যময় পাখি। পেঁচা কিংবা রাতচরা হতে পারে, কিন্তু স্থানীয়রা বললেন এর নাম হরিতকি পাখি। আমরা গেলাম কালেঙ্গা বাজারে। গ্রামীণ হাট সন্ধ্যেবেলায় জমজমাট। কালেঙ্গা বাজারে একটু পরপর খেঁজুর গাছ। উঁচামতন ঢিবির উপর বেতের চেয়ার দিয়ে ঘেরা একটি চা দোকানে বসলাম। নুন মিশিয়ে দোকানী রং চা পরিবেশনের পর এলাকার মুরব্বীরা আমাদের সাথে যোগ দিলেন। কেউ বলছেন এই বনের অতি প্রাকৃত ঘটনা, কেউ বলছেন বাঘের গপ্পো। এই এলাকায় মুক্তিযুদ্ধও হয়েছে। চশমা পড়া পর্যটকদের পেয়ে রেমা কালেঙ্গার ইতিহাস ঐতিহ্যের ডালি মেলে ধরলেন স্থানীয় লোকজন। এদিকে চান্নিপশর মায়াবী রাতে জঙ্গলটা যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছিলো। প্রান্ত আর শামীম এই অন্ধকারেই ঢুকে গেলো জঙ্গলে। এরকম রহস্যময় পরিবেশে কার না হরিয়ে যেতে মন চায়? মোবাইলে নেটওয়ার্ক নেই, ওদেরকে ফোনেও পাচ্ছিলাম না। অজানা একটা আশঙ্কা কাজ করছিলো সত্যি বলতে। গভীর রাতে তারা একগাল হাসি নিয়ে কটেজে ফিরলো। আমি কেন তাদের সাথে গেলাম না, আফসোস হচ্ছিলো। ভোরে আমরা কালেঙ্গা বনে ঢুকবো, তাই রাত জাগিনি।

Видео টিপরা গ্রাম | রেমাকালেঙ্গা ভ্রমণ (১ম পর্ব) канала Faysal Khalilur Rahman
Показать
Комментарии отсутствуют
Введите заголовок:

Введите адрес ссылки:

Введите адрес видео с YouTube:

Зарегистрируйтесь или войдите с
Информация о видео
14 октября 2022 г. 11:27:20
00:06:01
Яндекс.Метрика